175303409795954 175303409795954 Manas Modak: 2019 175303409795954

শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৯

victory of Humanism

"একটা জিনিস দেখবি আয়"- হঠাৎ ডাক শুনে অন্যমনস্ক ভাবটা মুহূর্তে কাটিয়ে অনিকদার কাছে গিয়ে বললাম-  কি বলছো দাদা?

অনিকদার ছাদের এক কার্নিশে নিয়ে গিয়ে একটা ফুলগাছ দেখিয়ে বললো-- "দেখ কতো বড় বড় ফুল!"

আমি দেখে অবাকহলাম ছাদের কার্নিশে দেওয়ালের গায়ে অগোছালোভাবে গজিয়ে ওঠা দুটো ফুলগাছ। একটা গোলাপি ফুলের আর একটা সাদা ফুলের আমার অত্যন্ত পরিচিত "নয়নতারা"।

  


গাছের শিকড়ে মাটিতে নেই।  জল দেওয়ার‌ লোক নেই। দেখাশোনার‌ও কেউ নেই।

সকালের দিকে একটু রোদ পড়ে এইটুকুই। সতেজ সুগঠিত গাছটি ফুলে ভরে আছে।


অনিক দা, আবার বললো-- “এবার পাশের টবের ফুলগাছগুলো দেখ!”




আমি তাকিয়ে দেখলাম, সিমেন্টের বড় বড় টবে, অনেকগুলো "নয়নতারা" ফুল গাছ। আর তাতে অনেক ফুল হয়েছে কিন্তু সবগুলো কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে । গাছগুলো‌ও নেতিয়ে রয়েছে। অথচ ঐগাছগুলোর পরিচর্যা করার লোক আছে। গাছের শিকড়ে মাটির অভাব নেই, আর জল দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।


‌অনিক দার দেওয়া ছোট্ট উদাহরণটাই  ছিল সকলের জীবনে একটা শিক্ষণীয় বার্তা।

এই সমাজে এক শ্রেণির মানুষ বসবাস করেন যারা সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত। তাদেরকে সমাজের অভিজাত শ্রেণি বা অর্থশালী ব্যক্তিরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ওরা ভুলে যায়  ভালোবাসা, সম্মানবোধ গরিবদেরও আছে। বুদ্ধিজীবি ও এলিট শ্রেণির মানুষরা ঐ পিছিয়েপড়া অর্থনৈতিক দুর্বল মানুষদের নূন্যতম মর্যাদাও দেয় না।



অনাহারে অর্ধাহারে যাদের জীবন, মাথার উপর নীল আকাশই যাদের ভরসা, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ জন্ম নেয় যার অদম্য জেদ, দু'চোখে  সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন! কারও স্বপন পূরণ হয়, আবার কারও স্বপ্ন কালের আঁধারে তলিয়ে যায়। এঁদের মধ্যে যারা বেঁচে থেকে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করে  তারাই আসল হীরে। তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতাবোধ, পরোপকারী মনোভাব তীব্রভাবে দেখা যায়। তাদের মানসিকতা গড়ে ওঠে "অপরের মঙ্গল কামনাই নিজ মঙ্গল কামনার প্রসূতি" এই ধ্যান-ধারণার মধ্য দিয়ে।

অপরদিকে বিত্তশালী, ঐশ্বর্যশালী, এলিট শ্রেণির মানুষের জীবন, যেখানে সামাজিক সম্মান উপচে পড়ছে। সেই ঘরের ছেলে-মেয়েদের ঔদ্ধত্ব, অহংকার, গরীব মানুষদের ছোট নজরে দেখার প্রবণতা, অপমান করার প্রবণতা তীব্রভাবে দেখা যায়। নিজের লাভের জন্য অপরকে বিপদে ফেলতে  এঁরা কার্পণ্য করে না।

  প্রায় ৮০ শতাংশ এলিট শ্রেণির মানুষরা এরকমই হয়ে থাকেন। বাকি ২০ শতাংশ মানুষ ব্যতিক্রমী হয়ে থাকেন।  প্রচন্ড বিত্তশালী পরিবারে চোর, আর প্রচন্ড গরীব ঘরের ছেলে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন এই ভারতবর্ষে।  তফাৎ কি জানেন! মানুষের মানসিকতা।

যতদিন যাচ্ছে মানুষ কৃত্তিম হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলছে। হারিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছার স্বাধীনতা, মানসিক গঠন।  হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ছোট বেলা।

 আমাদের ছোটবেলা কেটেছে বাঁশ গাছের দোলা খেলে। বিকেলে মাঠে খেলাধূলা করে,  বন্ধুদের সাথে আম বাগানে আম পেড়ে। উঁচু বালির ঢিবিতে বসে ঘুঁড়ি উড়িয়ে।  কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের ছোট বেলা কাটছে বদ্ধ ঘরে টাচ স্ক্রিনের মোবাইলে। যৌবন কাটছে দামী মোটর বাইক চড়ে।  এটাই তাদের জগৎ।

প্রকৃতির কাছে তাদের কিছু শেখার নেই। তাদের অভিবাবকরাও ছেলে-মেয়ে একটু বড় হলেই দামী মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে গেম খেলার জন্য। বাঃ বেশ! সব কর্তব্য এখানেই শেষ।

প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। সৃজনশীলতার থেকে মুখস্থবিদ্যা ও মনে রাখার ক্ষমতা নতুনপ্রজন্মের শিশুদের বেড়ে গেছে। মানবিকতা কি! এটা বাড়ির বেশিরভাগ অভিবাবকরা শেখান না।

ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে! আগামী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যে আর কেউ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ জন্মাবেনা, জন্মাবেনা রাজা রামমোহন রায়। কারণ সমাজ তার ভারসাম্য হারিয়েছে।

 মানুষ এখন ঘোরতর স্বার্থপরতার দিকে ছুটে চলেছে। কে বড় হবে! এই নিয়েই হচ্ছে লড়াই। চারিদিকে হিংসা-ভেদাভেদের  বাতাবরণের দূষণ বেড়েই চলেছে।

তবে আশার আলো একটাই, একদিন আসবে আধিপত্যকারীদেরও চেতনার উন্মেষ ঘটবে। চেতনার আগুনে আত্মশ্লাঘা পুড়ে ছারখার হয়ে মানুষ অপরের প্রশংসাতে প্রশংসিত হবেই।

 মুক্তির উপায়টাও প্রকৃতি ঠিক করে দিয়েছে। ঠিক ঐ দেওয়াল গজিয়ে ওঠা অবহেলিত নয়নতারার মতোনই। তারাই  নবপ্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মগুলো ফিরিয়ে এনে আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ তারাই গড়ে তুলবে।



মানবিকতা জন্ম নেবেই।  আগামী নতুন সমাজের পথ দেখাতে তৈরি হচ্ছে নব প্রজন্ম। কোনও রকম বাধা বিপত্তি তাদেরকে হারিয়ে দিতে পারবে না।

 যদি শুরু থেকে শেষ হয়, তবে শেষ থেকে শুরু হবেই। অন্ধকারের পরে আলো আসবেই। তার মধ্যে হারিয়ে যাবে শত শত দুঃখিনী মা। হারিয়ে যাবে তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। হারিয়ে যাবে ফুটপাতে শুয়ে থাকা কোটি কোটি অনাথ শিশুরা।  মায়ের চোখের জল, তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে জন্ম নেবে  আগামী প্রজন্ম, যাঁরা এই পৃথিবীকে মানবিকতার পথ দেখাবে। তারাই হবে অন্ধকারে নিমজ্জিত পিছিয়ে পড়া সমাজের ত্রাতা।


“আঁধার হতে নিমজ্জিত দীপ্ত শিখা,
মনুষ্যত্বকে করে আহ্বান।
শত বঞ্চনা, শত দ্রারিদ্রকে পিছে ফিরে,

হবে মানবিকতারই জয়গান।”
-------সমাপ্ত------


বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০১৯

মনে পড়ে যায় হারানো ছোটোবেলা

//গ্রাম‍্য ছেলেবেলা//

বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়াতে দৌড়াতে স্কুলে যাওয়া।
টালির চালের প্রাইমারি স্কুলে মাটির মেঝেতে বস্তা পেতে ক্লাস করা।
মুক্তি দিদিমনি গলায় "আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে" গানের সুরে গলা মিলিয়ে প্রার্থনা।
টিফিনের সময় দুকানে আঙুল ঢুকিয়ে শব্দ বন্ধ করে সবার হৈচৈ ঠেলা-ঠিলি, খেলা-ধুলোর দৃশ‍্য অতি মজার ছলে উপভোগ করা।
গ্রীষ্মের দুপুরে বন্ধুদের সাথে আমবাগানে ঠিল মেরে আম পেড়ে সবাইমিলে ভাগ করে খাওয়া।
পুকুর পাড়ে উঁচু বালির ঢিবিতে বসে ঘুড়ি ওঠানো।
লুকিয়ে লুকিয়ে বন্ধুদের গুলি খেলে বাবার কাছে বকা খাওয়া।
দুপুরে পুকুরে বন্ধুদের সাথে একসাথে স্নান করা, সাঁতার কাটার প্রতিযোগিতা...

//শহুরে ছেলেবেলা//

বেহালা থানার পাশ দিয়ে আঁকাবাকা গলি পথ দিয়ে তেলের মিলের পাশ দিয়ে বনমালি নস্কর রোডে আমার বড় জ‍্যেঠুর বাড়ি বাবার সাথে প্রায়‌ই যেতাম। সেটাও ছিল আমার ছোটবেলা।
কোন সময় বাসে চড়ে, কখন‌ও কখন‌ও ট্রামে করে যেতাম। বেশ আনন্দ হত।
মনে পড়ে যায় দুপুরে জ‍্যেঠুর বাড়ি খাওয়া দাওয়ার পর বড়দের মাঝে বসে একটু অন‍্যরকমভাবে মহাভারত দেখা। কারণ অতো ছোটবেলায় হিন্দি বুঝতাম না। শুধু ছবি দেখতে এক ঘেঁয়ে লাগত। দুহাতে কান চেপে শব্দ আটকে দিয়ে মহাভারতে প্রত‍্যেক চরিত্রের ঠোঁট নাড়াগুলোকে নিজের কল্পনায় ভাষা দিতাম, আর খুব মজা করে তা উপভোগ করতাম।
বিকেলে গলির মধ‍্যে বেহালায় পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলার মজা।
সন্ধ‍্যেবেলা জ‍্যেঠুর বাড়ির ছাদে প্রতিবেশী ছেলে-মেয়ে বন্ধুদের সাথে গানের লড়াইতে অংশ নেওয়া। মাঝে মাঝে কুইজ কনটেস্ট, বা শব্দ ধাঁধাও হতো।
পেনসিল স্কেচে ছবি আঁকাটা আমার ছোট থেকেই শখ,তাই বেহালায় বুম্বাদার আঁকার কোচিং গেলেই ঘন্টারপর ঘন্টা বসে আঁকা দেখতাম।
এরপর আমার পিসির বাড়ি সোদপুর, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা।
বাবার সাথে অনেকবার গিয়েছি। সেটাও অনেকটা পথ। আঁকাবাঁকা গলি পথের শেষে পিসির বাড়ি। প্রায় আমার সমবয়সী ভাগ্নের সাথে ঘুরতে যেতাম। কখন‌ও আবার ঐ পাড়ার শহুরে ছেলে-মেয়েদের সাথে লুকোচুরি খেলতাম।
ঘর বন্দি থাকতে আমার একদম‌ই ভালো লাগতো না। তাই আমি আর ভাগ্নে দুজনে সন্ধ‍্যেবেলা চলে যেতাম অনেকটা দূরে গঙ্গার ঘাটে। সেখানে পাশেই মন্দিরে আরতির সুর, ঘন্টা ধ্বনি আর দুরে লঞ্চ, ভটভটির আলো গুলো আস্তে আস্তে বড় থেকে জোনাকির মতো ছোট হয়ে যাওয়ার দৃশ‍্য আমার কল্পনার রাজ‍্যে জোয়ারের ঢেউ তুলতো। সেই সময়টা আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলতাম। এইভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতো।
আজ আমাদের মফঃস্বলে আধুনিকতার ছোঁয়া। বড় বড় ফ্ল‍্যাট আকাশ ছুঁতে চায়। বালির ঢিবি বা গানের লড়াইয়ের আসর কোনটাই আর নেই।
তাই মনে মনে প্রশ্ন জাগে কোনটা ভালো ছিল? কল্পনার তিলোত্তমা নগরী! গ্রাম বাংলার কল্পনা!

বুধবার, ৮ মে, ২০১৯

মন্দিরের আতঙ্ক


 মন্দিরের আতঙ্ক



আকাশটা তখন মেঘে ঢাকা। তারারাও সেদিন ছুটি নিয়েছিল। রাত তখন গভীর। সময়টা ১১টা হবে। গড়িয়া মোড়ে বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকলাম। নির্জন জনপথ। পথের ধারে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তার কুকুরগুলো খুব ডাকা ডাকি করছে। হঠাৎ ঢাকঢোল ঘন্টা বাজার আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হল কোথাও পুজো হচ্ছে। মনে একটু সাহস এলো। তবুও কোথাও তো মানুষ আছে।

আমি এক নই। আরো জোরে জোরে হাঁটতে থাকলাম। আওয়াজটা খুব কাছাকাছি চলে এলাম। কাছেই একটা মন্দির নজরে এলো। স্ট্রীট ল্যাম্পের আলোয় মন্দের  সাদা রঙের চূড়োটা যেন ডাকছে। ভগবানের নাম স্মরণ করে অবশেষে মন্দির সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম। কোন জনপ্রাণী নেই। অথচ কোন একটা অদৃশ্য শক্তি মন্দিরের ঘন্টা ঢাক বাজিয়ে চলেছে। মন্দিরটার ভিতর অন্ধকার। ভালো করে বুঝতে পারছিলাম না ওটা কোন দেবতার মন্দির। মনে মনে ভাবলাম, -- ভগবান এ কোন লীলা আমাকে দেখাতে চাইছেন! ভক্তিভরে সেদিন প্রণাম করে, বাড়ি চলে এলাম। মনে কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই গেল ঘণ্টা, ঢাকটা তবে কে বাজাচ্ছিল।






...
।। কিছুদিন পর । ।

এক সন্ধ্যে বেলা  আবার  সেই মন্দিরের পাশের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম। দেখলাম সত্যি সত্যিই মহা ধুমধাম করে পূজা-আরতি চলছে। মন্দির চত্বর ভোগ ও নৈবেদ্য, ধুপ ও দীপ, ফুল ফলের গন্ধে কেমন একটা মা মা ভাবের সৃষ্টি হয়েছে।  স্নানীয় অনেক মা-বোনেরা মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছেন। মন্দিরের পুজারি পরনে নামাবলি, শ্বেত বস্ত্র, ভক্তিভরে মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন--

"জয়ন্তী মঙ্গলা কালীভদ্রা কালী
কপালিনীদূগা শিবা সমাধ্যাতীসাহা সুধা নমস্তুতে।
ওঁ  নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে , নিবেদয়ামি চাত্মানংত্বং গতিঃ পরমেশ্বরঃ ।
ওঁ কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিনি দেবী নারায়ণী নমস্তুতে ,মহিষাঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমস্তুতে । এষ পুস্পাঞ্জলিঃ শ্রীমদ্দদক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ ।




ঠিক এই সময়---


নজরে এলো, ঢাক ও ঘণ্টার দিকে। মন্দিরের মূল ফটকের ঠিক পাশেই সেটা রাখা আছে এবং সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে কোনও মানুষ ছাড়াই সেটা বাজানো হচ্ছে। এটা দেখে মনে মনে খুব হাসি পেলো।  সেদিন কি ভয়ই না আমি পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা যে আধুনিক যুগ, মানুষ কতো উন্নত। হয়তো সেদিন সেই ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টার ছবিটা না দেখে বুঝতেই পারতাম না।




বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ভালো থেকো ভালোবাসা


আমি স্পষ্টবাদী, দুষ্টু ছেলে,

অল্পতেই তুষ্ট হ‌ই, তোর ছলনাতে।

গদ‍্যময় জীবন থেকে লিখি কবিতা,

নির্ঘুম থেকেছি রাতের পর রাত।

বুঝিনি প্রেমের মধ্যে রয়েছে অজানা রহস্য।

ছিন্ন করলি মায়াজাল, নিঃশব্দে, নিভৃতে।

 তবুও কষ্ট পাও, চাইনি কোন‌ওদিন,

হারানো সেদিন, বিকেলের পড়ন্তরোদে মনে পড়ে,

এখন বুকের ডান পাশে জমে আছে ব্যাথা;

সিগারেটের ধোঁয়ায় দাগ কাটে  অজানা কতো রোগ।

হেরে গেলেও  ভালবাসি তোমায়,

শেষদিন পর্যন্ত চাইবো ভালো থেকো,

ভালো থেকো ভালোবাসা।

মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৯

ভালো থেকো বন্ধু

অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমানে চলা, না ভবিষ্যৎ-এর চিন্তা করে বর্তমানকে উন্নত করা। কোনটা করা ঠিক তা সময়ের মাপকাঠিতে বলা খুব কঠিণ।

 গতানুগতিক/আধুনিক নাকি চিন্তাশীলতা কোনটা বর্তমানে প্রয়োজন? কেউ নিজের কৃতিত্বের কথা নিজের মুখে বললে, সেটা হয় অহংকার, আর অপরে বললে সেটা অলংকার? এ কেমন নিয়ম!

 তালে তাল দেওয়া বা তেলা মাথায় তেল দেওয়ার লোকের অভাব নেই, কিন্তু সত‍্যি কথাটা মুখের উপর বলার লোক দূর্বীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সমস‍্যা অনেক থাকতেই পারে, ভুল অনেক থাকতেই পারে কিন্তু একটা শান্তনা বা উৎসাহ দিয়ে ঠিক পথটা ধরিয়ে দেওয়া, ঠিক কাজটা করিয়ে নেওয়ার লোকের অভাব।

জীবনটা একটা ছন্দ, সুর-তালের মোড়ক নয়, যেটা গানের তালে তালে বাজতে থাকবে। জীবনটা একটা সংগ্রাম, আদর্শ অনুসর করে জীবন বিপন্ন করার একটা লড়াই। 



ছোট্ট জীবন, একদিন শেষ হবেই। কিন্তু কিছু কথা , কিছু ভালো  ব‍্যবহার থেকে থেকে যায় স্মৃতির অতল গভীরে। সেই সুখ স্মৃতির পরশ সবাই পায় না। যারা পায় তারা ভাগ‍্যবান।

আমার জীবনটা শুরু হয়ে ছিলো শিক্ষকতা দিয়ে। প্রাইভেট টিউশন থেকে প্রাইভেট স্কুল শিক্ষক। কোন ক্ষেত্রেই পরিশ্রমের খাঁকতি করিনি। কামাই করা আমার ধাতে ছিল না।

 একটি খ্রীষ্টান মিশনারি স্কুল সেন্ট থমাস মার থমা স্কুল। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ‍্যা অল্প হলেও স্কুলটা আমার কাছে ছিলো একটা পরিবারের মতো। একটা মায়ার বন্ধনে সাড়ে ছয় বছর কাটিয়েছিলাম।


অনেক নিয়মানুবর্তিতার মধ‍্য দিয়ে এই স্কুলে শিক্ষকতা করতে হতো। আমি কিছু গতানুগতিকতার উর্ধ্বে উঠে কিছু কাজ করতাম। যেমন প্রতিদিন নিয়ম করে টিফিন টাইমে আমার দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেণীর অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাত করতাম। তাদের সমস‍্যার কথা শুনতাম। এবং একটা ছোট্ট ডাইরিতে নোট করে, সাধ‍্যমতো সমাধান করতাম।

 অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের জন‍্য টিফিন টাইমে নিজে টিফিন না খেয়ে ওদেরকে একস্ট্রা ক্লাস নিতাম । এটা কয়েক বছর করেছিলাম, তাতে অনেক দুর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নতি হয়েছিলো। কিন্তু কোন কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ মানা করায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম।

আসলে সেই পরিশ্রম‌ও ছিলো গতানুগতিকার বাইরে। ইট-কাঠ-পাথরে বিল্ডিং এ কিভাবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব সেটাই আমার চিন্তাভাবনা আগেও ছিলো এখন‌ও আছে। লোকে বিদ্রুপ ব‍্যঙ্গ করে আমাকে বলতে পারে পাগল! তাতে আমি কিছু মনে করি না, কারণ মানুষের ভালো করা, মানুষের ভাবাবেগের মূল‍্য দেওয়ার জন‍্য অনেক আত্মত‍্যাগ করতে হয়। যারা করে তারা তো মূল‍্যহীন হবেই! কি বলুন বন্ধুরা?

তবে জনতা-জনার্দনের বিচার সব থেকে বড় বিচার। ১০টা মানুষ টিটকিরি করলেও, বাকি ৯০টা মানুষ কিন্তু বোঝে কোন কাজটা ঠিক আর কোনটা ভুল! 

আমি যদি কিছু ভুল করে থাকি, তার জন‍্য আমি অনুতপ্ত‌। সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আর যদি কিছু ঠিক করে থাকি সেটা আপনাদের আশির্বাদে সম্ভব হয়েছে। স্কুল থেকে অফিস সর্বক্ষেত্রে পুরস্কারের পাশাপাশি তীরস্কার‌ও থাকবে। সহযোগিতার থেকে বেশী প্রতিযোগিতা থাকবে। এটা চিরাচরিত। তবুও মনের কোনে কান্না জমে ওঠে। মনে হয় এ জীবনে কি আছে! কেন আমি বেঁচে আছি? একটু শান্তি পাবো কবে?

আসলে জীবনে আমি বড় ক্লান্ত আবার চিরবিশ্রাম চাই। মাটির কোলে মাথা রেখে চিরনিদ্রায় শয়ন করে যন্ত্রণাদায়ক স্মৃতিচিহ্নগুলোকে চিরতরে মুছে ফেলতে চাই। ভালো থেকো বন্ধু।@m4tmc Home Posts Reviews Videos Photos Events About Community Jobs Groups Info and Ads Promote Manage Promotions