মনে পড়ে যায় হারানো ছোটোবেলা
//গ্রাম্য ছেলেবেলা//
বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়াতে দৌড়াতে স্কুলে যাওয়া।
টালির চালের প্রাইমারি স্কুলে মাটির মেঝেতে বস্তা পেতে ক্লাস করা।
মুক্তি দিদিমনি গলায় "আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে" গানের সুরে গলা মিলিয়ে প্রার্থনা।
টিফিনের সময় দুকানে আঙুল ঢুকিয়ে শব্দ বন্ধ করে সবার হৈচৈ ঠেলা-ঠিলি, খেলা-ধুলোর দৃশ্য অতি মজার ছলে উপভোগ করা।
গ্রীষ্মের দুপুরে বন্ধুদের সাথে আমবাগানে ঠিল মেরে আম পেড়ে সবাইমিলে ভাগ করে খাওয়া।
পুকুর পাড়ে উঁচু বালির ঢিবিতে বসে ঘুড়ি ওঠানো।
লুকিয়ে লুকিয়ে বন্ধুদের গুলি খেলে বাবার কাছে বকা খাওয়া।
দুপুরে পুকুরে বন্ধুদের সাথে একসাথে স্নান করা, সাঁতার কাটার প্রতিযোগিতা...
//শহুরে ছেলেবেলা//
বেহালা থানার পাশ দিয়ে আঁকাবাকা গলি পথ দিয়ে তেলের মিলের পাশ দিয়ে বনমালি নস্কর রোডে আমার বড় জ্যেঠুর বাড়ি বাবার সাথে প্রায়ই যেতাম। সেটাও ছিল আমার ছোটবেলা।
কোন সময় বাসে চড়ে, কখনও কখনও ট্রামে করে যেতাম। বেশ আনন্দ হত।
কোন সময় বাসে চড়ে, কখনও কখনও ট্রামে করে যেতাম। বেশ আনন্দ হত।
মনে পড়ে যায় দুপুরে জ্যেঠুর বাড়ি খাওয়া দাওয়ার পর বড়দের মাঝে বসে একটু অন্যরকমভাবে মহাভারত দেখা। কারণ অতো ছোটবেলায় হিন্দি বুঝতাম না। শুধু ছবি দেখতে এক ঘেঁয়ে লাগত। দুহাতে কান চেপে শব্দ আটকে দিয়ে মহাভারতে প্রত্যেক চরিত্রের ঠোঁট নাড়াগুলোকে নিজের কল্পনায় ভাষা দিতাম, আর খুব মজা করে তা উপভোগ করতাম।
বিকেলে গলির মধ্যে বেহালায় পাড়ার ছেলেদের সাথে ক্রিকেট খেলার মজা।
সন্ধ্যেবেলা জ্যেঠুর বাড়ির ছাদে প্রতিবেশী ছেলে-মেয়ে বন্ধুদের সাথে গানের লড়াইতে অংশ নেওয়া। মাঝে মাঝে কুইজ কনটেস্ট, বা শব্দ ধাঁধাও হতো।
পেনসিল স্কেচে ছবি আঁকাটা আমার ছোট থেকেই শখ,তাই বেহালায় বুম্বাদার আঁকার কোচিং গেলেই ঘন্টারপর ঘন্টা বসে আঁকা দেখতাম।
এরপর আমার পিসির বাড়ি সোদপুর, পানিহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা।
বাবার সাথে অনেকবার গিয়েছি। সেটাও অনেকটা পথ। আঁকাবাঁকা গলি পথের শেষে পিসির বাড়ি। প্রায় আমার সমবয়সী ভাগ্নের সাথে ঘুরতে যেতাম। কখনও আবার ঐ পাড়ার শহুরে ছেলে-মেয়েদের সাথে লুকোচুরি খেলতাম।
ঘর বন্দি থাকতে আমার একদমই ভালো লাগতো না। তাই আমি আর ভাগ্নে দুজনে সন্ধ্যেবেলা চলে যেতাম অনেকটা দূরে গঙ্গার ঘাটে। সেখানে পাশেই মন্দিরে আরতির সুর, ঘন্টা ধ্বনি আর দুরে লঞ্চ, ভটভটির আলো গুলো আস্তে আস্তে বড় থেকে জোনাকির মতো ছোট হয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমার কল্পনার রাজ্যে জোয়ারের ঢেউ তুলতো। সেই সময়টা আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলতাম। এইভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেতো।
আজ আমাদের মফঃস্বলে আধুনিকতার ছোঁয়া। বড় বড় ফ্ল্যাট আকাশ ছুঁতে চায়। বালির ঢিবি বা গানের লড়াইয়ের আসর কোনটাই আর নেই।
তাই মনে মনে প্রশ্ন জাগে কোনটা ভালো ছিল? কল্পনার তিলোত্তমা নগরী! গ্রাম বাংলার কল্পনা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন