মন্দিরের আতঙ্ক
আকাশটা তখন মেঘে ঢাকা। তারারাও সেদিন ছুটি নিয়েছিল। রাত তখন গভীর। সময়টা ১১টা হবে। গড়িয়া মোড়ে বাস থেকে নেমে হাঁটতে থাকলাম। নির্জন জনপথ। পথের ধারে দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তার কুকুরগুলো খুব ডাকা ডাকি করছে। হঠাৎ ঢাকঢোল ঘন্টা বাজার আওয়াজ শুনতে পেলাম। মনে হল কোথাও পুজো হচ্ছে। মনে একটু সাহস এলো। তবুও কোথাও তো মানুষ আছে।
আমি এক নই। আরো জোরে জোরে হাঁটতে থাকলাম। আওয়াজটা খুব কাছাকাছি চলে এলাম। কাছেই একটা মন্দির নজরে এলো। স্ট্রীট ল্যাম্পের আলোয় মন্দের সাদা রঙের চূড়োটা যেন ডাকছে। ভগবানের নাম স্মরণ করে অবশেষে মন্দির সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম। কোন জনপ্রাণী নেই। অথচ কোন একটা অদৃশ্য শক্তি মন্দিরের ঘন্টা ঢাক বাজিয়ে চলেছে। মন্দিরটার ভিতর অন্ধকার। ভালো করে বুঝতে পারছিলাম না ওটা কোন দেবতার মন্দির। মনে মনে ভাবলাম, -- ভগবান এ কোন লীলা আমাকে দেখাতে চাইছেন! ভক্তিভরে সেদিন প্রণাম করে, বাড়ি চলে এলাম। মনে কিন্তু প্রশ্নটা থেকেই গেল ঘণ্টা, ঢাকটা তবে কে বাজাচ্ছিল।
...
।। কিছুদিন পর । ।
এক সন্ধ্যে বেলা আবার সেই মন্দিরের পাশের রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম। দেখলাম সত্যি সত্যিই মহা ধুমধাম করে পূজা-আরতি চলছে। মন্দির চত্বর ভোগ ও নৈবেদ্য, ধুপ ও দীপ, ফুল ফলের গন্ধে কেমন একটা মা মা ভাবের সৃষ্টি হয়েছে। স্নানীয় অনেক মা-বোনেরা মন্দিরের সামনে জড়ো হয়েছেন। মন্দিরের পুজারি পরনে নামাবলি, শ্বেত বস্ত্র, ভক্তিভরে মন্ত্র উচ্চারণ করে চলেছেন--
"জয়ন্তী মঙ্গলা কালীভদ্রা কালী
কপালিনীদূগা শিবা সমাধ্যাতীসাহা সুধা নমস্তুতে।
ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে , নিবেদয়ামি চাত্মানংত্বং গতিঃ পরমেশ্বরঃ ।
নজরে এলো, ঢাক ও ঘণ্টার দিকে। মন্দিরের মূল ফটকের ঠিক পাশেই সেটা রাখা আছে এবং সম্পূর্ণ যান্ত্রিক উপায়ে কোনও মানুষ ছাড়াই সেটা বাজানো হচ্ছে। এটা দেখে মনে মনে খুব হাসি পেলো। সেদিন কি ভয়ই না আমি পেয়ে গিয়েছিলাম। এটা যে আধুনিক যুগ, মানুষ কতো উন্নত। হয়তো সেদিন সেই ঢাক, কাঁসর, ঘণ্টার ছবিটা না দেখে বুঝতেই পারতাম না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন