বিজ্ঞাপন ছাড়া সিনেমা/সিরিয়াল দেখেছেন কি কখনো?
না! বিজ্ঞাপন ছাড়া চলচ্চিত্র/সিরেয়াল একঘেয়েমিপূর্ণ। মোটেও চিত্তাকর্ষক হয় না।
ঠিক তেমনি , নেতার পাশে দাঁত বার করে সেল্ফি দেওয়া টাও বিজ্ঞাপনেরই অঙ্গ। এটা অন্য ভাবে দেখবেন না।
আসলে মানুষের জীবনটাই একটা বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন ছাড়া নিজেকে জ্ঞাপন বা প্রকাশ করা যায় না। আর নিজেকে প্রকাশ করতে কে চায় না বলুন?
একটা সময় গেছে বিজ্ঞাপন ছাড়াই সব কিছু হতো। একশ্রেণীর মানুষ ছিলো, যারা নিরবে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য, রাজনীতির জন্য নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থভাবে, ত্যাগের মাধ্যমে কাজ করে গেছেন, তাদেরকে আজ কে-ইবা মনে রেখেছেন। যখন মানুষের প্রয়োজন ছিলো ঐ ব্যাক্তিকে মনে রেখেছেন, যখন প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে সেই মানুষগুলোকে সবাই ভূলে গেছে। এটাই বাস্তব।
তাই বিজ্ঞাপনের বড়ো প্রয়োজন। তবে বিজ্ঞাপন, কাজের থেকে কম হওয়া ভালো, কিন্তু কোন মতেই মূল কাজ / বিষয়বস্তু থেকে বেশী না হয়ে যায় ,এটা মাথায় রাখতে হবে।
আচ্ছা হাত তুলে বলুনতো! এবারের দূর্গাপূজাতে ঠাকুর দেখতে গিয়ে কে কে সেল্ফি তোলেন নি? কিংবা এবার কালীপূজাতে ঘুরতে গিয়ে কে সেলফি দেবেন না?
দূরবীন দিয়ে খুঁজে বার করতে হবে।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষ, দামী ক্যামেরা,উন্নতমানের ক্যামেরা কিনছে সেল্ফি তোলার জন্য। সেল্ফি টাও একটা শিল্প। কে কতো সুন্দরভাবে নিজেদের শিল্পপ্রদর্শন করবে সেই নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
আমরাও এই বিজ্ঞাপনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি। সমাজ, রাজনীতি , অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মনীতি,ব্যাবসা- বাণিজ্য প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন লক্ষ করা যায়।
স্যোসাল মিডিয়া বিজ্ঞাপনের একটা বড়ো ক্ষেত্র। মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করে, চোখ-নাক-মুখ বেঁকিয়ে সেল্ফির মাধ্যমে। আর সেই ছবি দেখে প্রেম প্রেম ভাবে উদ্বুদ্ধ ছেলেরা হাজারটা লাইক দিলেই মেয়েদের সেই বিজ্ঞাপন দেওয়া স্বার্থক হয়। একইভাবে ছেলেরাও সেল্ফি দিয়ে থাকে । আবার প্রেমিক- প্রেমিকরা সেলফি দিয়ে পোষ্ট করে সকলের সামনে তাদের প্রেমের গভীরতা প্রমাণ করার জন্য।
গোটা স্যোসাল মিডিয়াটাই একটা বিজ্ঞাপন। শুধু বিজ্ঞাপন বললে বাংলা ভাষাকে ছোট করা হবে, বলবো প্রমাণ পত্র। আমি খাচ্ছি, দাও একটা সেল্ফি, খাওয়ার প্রমাণ । আমি যাচ্ছি, দাও একটা সেল্ফি , যাওয়ার প্রমাণ। আমি ঘুমাচ্ছি ,দাও একটা সেল্ফি ,ঘুমানোর প্রমাণ। আসলে জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত আমরা ক্যামেরা বন্দি করতে ভালোবাসি । স্যোসাল মিডিয়া একটা স্টোরেজ। যেটা ভবিষ্যৎ এর জন্য স্মৃতিগুলোর প্রমাণ রাখে। এটা ব্যাঁকা চোখে দেখার কিছু নেই ।
আর যারা যারা তাদের রাজনৈতিক প্রচারে নিজের নামটা লিখে দেন , ঠিক করেন, এই প্রতিযোগিতার যুগে একটা প্রমাণ রাখা ভালো। তা না হলে তার জেরক্স হয়ে অন্যের নামের স্ট্যাম্প পরে যাবে। যেমনটা নেপোয় মারে দই। নিজের নাম লেখাটা কোন নীতি, আদর্শের বিরোধী নয়, বরং আপনার পরিশ্রমের প্রমাণ।
একটা কথা বলছি কেউ অন্যভাবে নেবেন না। ব্রাক্ষ্মণরা বলে থাকেন, গৃহস্থদের ঘরে রান্না করার সময় বেল কাঠ পোড়াতে নেই। কিন্তু কিন্তু এটা কি জানেন? বেলকাঠের আগুনটা অনেকক্ষণ থাকে । অর্থাৎ খুব সুন্দরভাবে বেল কাঠ দিয়ে রান্না করা যায় । তাই ব্রাক্ষ্মণরা এই নিয়ম করেছেন , বেল কাঠ একমাত্র তারাই ব্যবহার করতে পারবেন , অন্য কেউ নয়। এটা ঠিক নয়।
সবাইতো নিজের পয়সায় নেট করে । আপনি আপনার ওয়ালে নিজের সেল্ফি দিতে পারেন, নিজের নাম দেওয়া পোষ্ট করেন ,তাতে অন্য জনের আপত্তি হওয়ার কারণ কেন হবে?
রাস্তায় কেউ অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে পড়ে থাকলে বা কেউ অসুস্থ হয়ে যন্ত্রণায় কাতরালে, তার ছবির সঙ্গে নিজের ছবি না দিয়ে, তাকে আগে বাঁচান। তার পাশে দাঁড়ান। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।সেলফি টেলফি পরে তুলবেন। আমাদের প্রত্যেকের এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যাতে সেলফি শিল্প কলঙ্কিত হয়। পরিশেষে বলবো, চলুক বিঞ্জাপন, উঠুক সেল্ফির ঝড় । তবে মানবিকতা, দায়বদ্ধতা, সহমর্মিতা বজায় চোখে ।