"একটা জিনিস দেখবি আয়"- হঠাৎ ডাক শুনে অন্যমনস্ক ভাবটা মুহূর্তে কাটিয়ে অনিকদার কাছে গিয়ে বললাম- কি বলছো দাদা?
অনিকদার ছাদের এক কার্নিশে নিয়ে গিয়ে একটা ফুলগাছ দেখিয়ে বললো-- "দেখ কতো বড় বড় ফুল!"
আমি দেখে অবাকহলাম ছাদের কার্নিশে দেওয়ালের গায়ে অগোছালোভাবে গজিয়ে ওঠা দুটো ফুলগাছ। একটা গোলাপি ফুলের আর একটা সাদা ফুলের আমার অত্যন্ত পরিচিত "নয়নতারা"।
গাছের শিকড়ে মাটিতে নেই। জল দেওয়ার লোক নেই। দেখাশোনারও কেউ নেই।
সকালের দিকে একটু রোদ পড়ে এইটুকুই। সতেজ সুগঠিত গাছটি ফুলে ভরে আছে।
অনিক দা, আবার বললো-- “এবার পাশের টবের ফুলগাছগুলো দেখ!”
আমি তাকিয়ে দেখলাম, সিমেন্টের বড় বড় টবে, অনেকগুলো "নয়নতারা" ফুল গাছ। আর তাতে অনেক ফুল হয়েছে কিন্তু সবগুলো কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে । গাছগুলোও নেতিয়ে রয়েছে। অথচ ঐগাছগুলোর পরিচর্যা করার লোক আছে। গাছের শিকড়ে মাটির অভাব নেই, আর জল দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।
অনিক দার দেওয়া ছোট্ট উদাহরণটাই ছিল সকলের জীবনে একটা শিক্ষণীয় বার্তা।
এই সমাজে এক শ্রেণির মানুষ বসবাস করেন যারা সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত। তাদেরকে সমাজের অভিজাত শ্রেণি বা অর্থশালী ব্যক্তিরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ওরা ভুলে যায় ভালোবাসা, সম্মানবোধ গরিবদেরও আছে। বুদ্ধিজীবি ও এলিট শ্রেণির মানুষরা ঐ পিছিয়েপড়া অর্থনৈতিক দুর্বল মানুষদের নূন্যতম মর্যাদাও দেয় না।


অনাহারে অর্ধাহারে যাদের জীবন, মাথার উপর নীল আকাশই যাদের ভরসা, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ জন্ম নেয় যার অদম্য জেদ, দু'চোখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন! কারও স্বপন পূরণ হয়, আবার কারও স্বপ্ন কালের আঁধারে তলিয়ে যায়। এঁদের মধ্যে যারা বেঁচে থেকে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করে তারাই আসল হীরে। তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতাবোধ, পরোপকারী মনোভাব তীব্রভাবে দেখা যায়। তাদের মানসিকতা গড়ে ওঠে "অপরের মঙ্গল কামনাই নিজ মঙ্গল কামনার প্রসূতি" এই ধ্যান-ধারণার মধ্য দিয়ে।
অপরদিকে বিত্তশালী, ঐশ্বর্যশালী, এলিট শ্রেণির মানুষের জীবন, যেখানে সামাজিক সম্মান উপচে পড়ছে। সেই ঘরের ছেলে-মেয়েদের ঔদ্ধত্ব, অহংকার, গরীব মানুষদের ছোট নজরে দেখার প্রবণতা, অপমান করার প্রবণতা তীব্রভাবে দেখা যায়। নিজের লাভের জন্য অপরকে বিপদে ফেলতে এঁরা কার্পণ্য করে না।
প্রায় ৮০ শতাংশ এলিট শ্রেণির মানুষরা এরকমই হয়ে থাকেন। বাকি ২০ শতাংশ মানুষ ব্যতিক্রমী হয়ে থাকেন। প্রচন্ড বিত্তশালী পরিবারে চোর, আর প্রচন্ড গরীব ঘরের ছেলে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন এই ভারতবর্ষে। তফাৎ কি জানেন! মানুষের মানসিকতা।
যতদিন যাচ্ছে মানুষ কৃত্তিম হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলছে। হারিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছার স্বাধীনতা, মানসিক গঠন। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ছোট বেলা।
আমাদের ছোটবেলা কেটেছে বাঁশ গাছের দোলা খেলে। বিকেলে মাঠে খেলাধূলা করে, বন্ধুদের সাথে আম বাগানে আম পেড়ে। উঁচু বালির ঢিবিতে বসে ঘুঁড়ি উড়িয়ে। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের ছোট বেলা কাটছে বদ্ধ ঘরে টাচ স্ক্রিনের মোবাইলে। যৌবন কাটছে দামী মোটর বাইক চড়ে। এটাই তাদের জগৎ।
প্রকৃতির কাছে তাদের কিছু শেখার নেই। তাদের অভিবাবকরাও ছেলে-মেয়ে একটু বড় হলেই দামী মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে গেম খেলার জন্য। বাঃ বেশ! সব কর্তব্য এখানেই শেষ।
প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। সৃজনশীলতার থেকে মুখস্থবিদ্যা ও মনে রাখার ক্ষমতা নতুনপ্রজন্মের শিশুদের বেড়ে গেছে। মানবিকতা কি! এটা বাড়ির বেশিরভাগ অভিবাবকরা শেখান না।
ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে! আগামী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যে আর কেউ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ জন্মাবেনা, জন্মাবেনা রাজা রামমোহন রায়। কারণ সমাজ তার ভারসাম্য হারিয়েছে।
মানুষ এখন ঘোরতর স্বার্থপরতার দিকে ছুটে চলেছে। কে বড় হবে! এই নিয়েই হচ্ছে লড়াই। চারিদিকে হিংসা-ভেদাভেদের বাতাবরণের দূষণ বেড়েই চলেছে।
তবে আশার আলো একটাই, একদিন আসবে আধিপত্যকারীদেরও চেতনার উন্মেষ ঘটবে। চেতনার আগুনে আত্মশ্লাঘা পুড়ে ছারখার হয়ে মানুষ অপরের প্রশংসাতে প্রশংসিত হবেই।
মুক্তির উপায়টাও প্রকৃতি ঠিক করে দিয়েছে। ঠিক ঐ দেওয়াল গজিয়ে ওঠা অবহেলিত নয়নতারার মতোনই। তারাই নবপ্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মগুলো ফিরিয়ে এনে আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ তারাই গড়ে তুলবে।
মানবিকতা জন্ম নেবেই। আগামী নতুন সমাজের পথ দেখাতে তৈরি হচ্ছে নব প্রজন্ম। কোনও রকম বাধা বিপত্তি তাদেরকে হারিয়ে দিতে পারবে না।
যদি শুরু থেকে শেষ হয়, তবে শেষ থেকে শুরু হবেই। অন্ধকারের পরে আলো আসবেই। তার মধ্যে হারিয়ে যাবে শত শত দুঃখিনী মা। হারিয়ে যাবে তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। হারিয়ে যাবে ফুটপাতে শুয়ে থাকা কোটি কোটি অনাথ শিশুরা। মায়ের চোখের জল, তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে জন্ম নেবে আগামী প্রজন্ম, যাঁরা এই পৃথিবীকে মানবিকতার পথ দেখাবে। তারাই হবে অন্ধকারে নিমজ্জিত পিছিয়ে পড়া সমাজের ত্রাতা।
অনিকদার ছাদের এক কার্নিশে নিয়ে গিয়ে একটা ফুলগাছ দেখিয়ে বললো-- "দেখ কতো বড় বড় ফুল!"
আমি দেখে অবাকহলাম ছাদের কার্নিশে দেওয়ালের গায়ে অগোছালোভাবে গজিয়ে ওঠা দুটো ফুলগাছ। একটা গোলাপি ফুলের আর একটা সাদা ফুলের আমার অত্যন্ত পরিচিত "নয়নতারা"।
গাছের শিকড়ে মাটিতে নেই। জল দেওয়ার লোক নেই। দেখাশোনারও কেউ নেই।
সকালের দিকে একটু রোদ পড়ে এইটুকুই। সতেজ সুগঠিত গাছটি ফুলে ভরে আছে।
অনিক দা, আবার বললো-- “এবার পাশের টবের ফুলগাছগুলো দেখ!”
আমি তাকিয়ে দেখলাম, সিমেন্টের বড় বড় টবে, অনেকগুলো "নয়নতারা" ফুল গাছ। আর তাতে অনেক ফুল হয়েছে কিন্তু সবগুলো কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে । গাছগুলোও নেতিয়ে রয়েছে। অথচ ঐগাছগুলোর পরিচর্যা করার লোক আছে। গাছের শিকড়ে মাটির অভাব নেই, আর জল দেওয়ার লোকেরও অভাব নেই।
অনিক দার দেওয়া ছোট্ট উদাহরণটাই ছিল সকলের জীবনে একটা শিক্ষণীয় বার্তা।
এই সমাজে এক শ্রেণির মানুষ বসবাস করেন যারা সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত। তাদেরকে সমাজের অভিজাত শ্রেণি বা অর্থশালী ব্যক্তিরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। ওরা ভুলে যায় ভালোবাসা, সম্মানবোধ গরিবদেরও আছে। বুদ্ধিজীবি ও এলিট শ্রেণির মানুষরা ঐ পিছিয়েপড়া অর্থনৈতিক দুর্বল মানুষদের নূন্যতম মর্যাদাও দেয় না।


অনাহারে অর্ধাহারে যাদের জীবন, মাথার উপর নীল আকাশই যাদের ভরসা, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ জন্ম নেয় যার অদম্য জেদ, দু'চোখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন! কারও স্বপন পূরণ হয়, আবার কারও স্বপ্ন কালের আঁধারে তলিয়ে যায়। এঁদের মধ্যে যারা বেঁচে থেকে সামাজিক মর্যাদা অর্জন করে তারাই আসল হীরে। তাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ, মানবিকতাবোধ, পরোপকারী মনোভাব তীব্রভাবে দেখা যায়। তাদের মানসিকতা গড়ে ওঠে "অপরের মঙ্গল কামনাই নিজ মঙ্গল কামনার প্রসূতি" এই ধ্যান-ধারণার মধ্য দিয়ে।
অপরদিকে বিত্তশালী, ঐশ্বর্যশালী, এলিট শ্রেণির মানুষের জীবন, যেখানে সামাজিক সম্মান উপচে পড়ছে। সেই ঘরের ছেলে-মেয়েদের ঔদ্ধত্ব, অহংকার, গরীব মানুষদের ছোট নজরে দেখার প্রবণতা, অপমান করার প্রবণতা তীব্রভাবে দেখা যায়। নিজের লাভের জন্য অপরকে বিপদে ফেলতে এঁরা কার্পণ্য করে না।
প্রায় ৮০ শতাংশ এলিট শ্রেণির মানুষরা এরকমই হয়ে থাকেন। বাকি ২০ শতাংশ মানুষ ব্যতিক্রমী হয়ে থাকেন। প্রচন্ড বিত্তশালী পরিবারে চোর, আর প্রচন্ড গরীব ঘরের ছেলে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন এই ভারতবর্ষে। তফাৎ কি জানেন! মানুষের মানসিকতা।
যতদিন যাচ্ছে মানুষ কৃত্তিম হয়ে যাচ্ছে। মানুষ তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়ে ফেলছে। হারিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছার স্বাধীনতা, মানসিক গঠন। হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ছোট বেলা।
আমাদের ছোটবেলা কেটেছে বাঁশ গাছের দোলা খেলে। বিকেলে মাঠে খেলাধূলা করে, বন্ধুদের সাথে আম বাগানে আম পেড়ে। উঁচু বালির ঢিবিতে বসে ঘুঁড়ি উড়িয়ে। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের ছোট বেলা কাটছে বদ্ধ ঘরে টাচ স্ক্রিনের মোবাইলে। যৌবন কাটছে দামী মোটর বাইক চড়ে। এটাই তাদের জগৎ।
প্রকৃতির কাছে তাদের কিছু শেখার নেই। তাদের অভিবাবকরাও ছেলে-মেয়ে একটু বড় হলেই দামী মোবাইল হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে গেম খেলার জন্য। বাঃ বেশ! সব কর্তব্য এখানেই শেষ।
প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। সৃজনশীলতার থেকে মুখস্থবিদ্যা ও মনে রাখার ক্ষমতা নতুনপ্রজন্মের শিশুদের বেড়ে গেছে। মানবিকতা কি! এটা বাড়ির বেশিরভাগ অভিবাবকরা শেখান না।
ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে! আগামী প্রজন্মের মানুষদের মধ্যে আর কেউ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ জন্মাবেনা, জন্মাবেনা রাজা রামমোহন রায়। কারণ সমাজ তার ভারসাম্য হারিয়েছে।
মানুষ এখন ঘোরতর স্বার্থপরতার দিকে ছুটে চলেছে। কে বড় হবে! এই নিয়েই হচ্ছে লড়াই। চারিদিকে হিংসা-ভেদাভেদের বাতাবরণের দূষণ বেড়েই চলেছে।
তবে আশার আলো একটাই, একদিন আসবে আধিপত্যকারীদেরও চেতনার উন্মেষ ঘটবে। চেতনার আগুনে আত্মশ্লাঘা পুড়ে ছারখার হয়ে মানুষ অপরের প্রশংসাতে প্রশংসিত হবেই।
মুক্তির উপায়টাও প্রকৃতি ঠিক করে দিয়েছে। ঠিক ঐ দেওয়াল গজিয়ে ওঠা অবহেলিত নয়নতারার মতোনই। তারাই নবপ্রজন্মের কাছে শিক্ষনীয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মগুলো ফিরিয়ে এনে আবার সুস্থ ও স্বাভাবিক সমাজ তারাই গড়ে তুলবে।
মানবিকতা জন্ম নেবেই। আগামী নতুন সমাজের পথ দেখাতে তৈরি হচ্ছে নব প্রজন্ম। কোনও রকম বাধা বিপত্তি তাদেরকে হারিয়ে দিতে পারবে না।
যদি শুরু থেকে শেষ হয়, তবে শেষ থেকে শুরু হবেই। অন্ধকারের পরে আলো আসবেই। তার মধ্যে হারিয়ে যাবে শত শত দুঃখিনী মা। হারিয়ে যাবে তাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘর। হারিয়ে যাবে ফুটপাতে শুয়ে থাকা কোটি কোটি অনাথ শিশুরা। মায়ের চোখের জল, তীব্র যন্ত্রণার মধ্যে জন্ম নেবে আগামী প্রজন্ম, যাঁরা এই পৃথিবীকে মানবিকতার পথ দেখাবে। তারাই হবে অন্ধকারে নিমজ্জিত পিছিয়ে পড়া সমাজের ত্রাতা।
“আঁধার হতে নিমজ্জিত দীপ্ত শিখা,
মনুষ্যত্বকে করে আহ্বান।
শত বঞ্চনা, শত দ্রারিদ্রকে পিছে ফিরে,
হবে মানবিকতারই জয়গান।”
-------সমাপ্ত------